কক্সবাজার থেকে নৌপথ দিয়ে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কক্সবাজার যাতায়াতের একমাত্র পথ কক্সবাজার শহরের ৬ নম্বর ঘাট। এ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে পাঁচ থেকে দশ হাজার মানুষ।
গেল রোববার (২৬ জানুয়ারি) দিনভর ঘাটে অবস্থানের সময় নানান অনিয়মের অভিযোগ নজরে আশে
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নেয়া, মাঝপথে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন বিকল, লাইফ জ্যাকেট না পরা সহ বিভিন্ন অভিযোগের কথা জানান যাত্রীরা।
দ্বীপের বাসিন্দা মো. সাইমন ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন,”মহেশখালীতে জন্ম হওয়ায় যেন আমাদের জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল সহ সকল জরুরি সেবা শহরে হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিতে হয়। আমাদের দুর্ভোগ দেখার মতো কেউ নেই।”
ষাটোর্ধ আমেনা খাতুন শহরে এসেছিলেন অসুস্থ মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে। তবে ব্রীজ পারাপারে ভোগান্তিতে পড়েছেন মা-মেয়ে। দ্রুত ব্রীজের অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করে ভোগান্তি লাঘবের দাবি তাদের।
সায়েমুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, “প্রায় সময় মূল চালকরা সহকারি চালকদের দিয়ে বোট চালায়। তখন দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে হলে সহকারি চালক দিয়ে স্পিড বোট চালানো বন্ধ করতে হবে।”
যাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্পিডবোট চালক এনাম বলেন,”দশজন যাত্রী তুললে হেল্পারসহ বোটে যাত্রীর সংখ্যা হয়ে যায় ১৩/১৪ জন। ফলে ওভারলোডের কারণে মাঝে মাঝে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। তাছাড়া বাচ্চা থাকলে একজন যাত্রী বেশি নেওয়া হয়। তখন যাত্রীদের সাথে বাকবিতন্ডা হলে তারা গালিগালাজ শুরু করে।
লাইফ জ্যাকেটের বিষয়ে উলটো ক্ষোভ ঝেড়ে এনাম জানান, প্রতিটা বোটে চালকের একটি সহ মোট ১১ টি লাইফ জ্যাকেট আছে। কিন্তু লাইফ জ্যাকেট দিলেও যাত্রীরা পরে না, উল্টো মারতে তেড়ে আসে।”
স্পিডবোট ও চালক মালিক সমিতির সভাপতি আতাউল্লাহ বোখারী জানান, ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ে এই ঘাট। জেলা প্রশাসন তাদের লোকজন উঠিয়ে নেয়ায় বোট মালিকদের পক্ষ থেকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোকজন নিয়োগ করা হয়।
অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে আতাউল্লাহ বোখারী বলেন,”বিষয়টি শতভাগ পর্যবেক্ষণ করা হয়। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঘাটে থাকা লাইন ম্যানরা সব সময় তদারকি করে।”
তবে লাইনম্যান সাদ্দাম হোসেন জানান, স্পীড বোটের তেল খরচ ও চালকদের বেতন সব মিলে এই ভাড়া পোষায় না তাদের।
অন্য যেকোনো দ্বীপের তুলনায় এই মহেশখালী দ্বীপের ভাড়া সবচেয়ে কম জানিয়ে সাদ্দাম বলেন, এরপরও যদি যাত্রীদের অভিযোগ থাকে তাহলে আর কিছু বলার নেই।
এছাড়া লাইফ জ্যাকেট প্রসঙ্গে লাইন ম্যান সাদ্দাম বলেন,”স্পিডবোটে ওঠার সময় লাইট জ্যাকেট পড়লেও মাঝপথে তা খুলে ফেলে। যাত্রীদেরকে সতর্ক করা ছাড়া আমাদের পক্ষে আর কিছু করার থাকে না।”
এই নৌপথের নিয়মিত যাত্রী সাইমন জানান, এই ঘাটটি দেখভালের দায়িত্বে আছে কক্সবাজার ও মহেশখালীতে
দুইটি পৌরসভা, জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ সহ আছে ৪ টি কর্তৃপক্ষ। তবে এই ঘাটের অব্যবস্থাপনা নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। একজন আরেকজনের উপর দায় চাপিয়ে দিয়ে বাঁচে। দিনশেষে দ্বীপবাসী অবহেলিত।
ঘাটের সকল অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনার ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন সজিব জানান, ঘাটের সকল অব্যবস্থাপনার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ঘাটটি পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply