ময়মনসিংহে পাবদা মাছ চাষে সফলতা পেয়েছে মৎস্য চাষীরা। অন্যান্য মাছের তুলনায় ঝুঁকি কম এবং খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই পাবদা মাছ চাষ। ফলে পাবদা মাছ চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষীদের। ময়মনসিংহ জেলার সকল উপজেলায় কমবেশি সকল প্রজাতির মাছ চাষ হয়ে থাকলেও সবচেয়ে বেশি পাবদা মাছ চাষ হয়ে থাকে জেলার মুক্তাগাছা,ত্রিশাল, গৌরীপুর,তারাকান্দা ও ফুলপুর উপজেলায়।
কথা হয় তারাকান্দা উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের কাশিগঞ্জ এলাকার মাছ চাষী আব্দুল লতিফ চেয়ারম্যানের সাথে। তিনি বলেন, তিনি অনেক আগে থেকে মাছ চাষ করছেন। তিনি কৈ, শিং,মাগুর, টেংড়া,গুলশা, পাবদা ও বাংলা মাছের চাষ করছেন। তবে তিনি চার বছর যাবৎ সবচেয়ে বেশি পাবদা মাছের চাষ করছেন। এ বছর তিনি ২০ লাখ পাবদা মাছ চাষে দিয়েছে। তিনি বলেন পরিকল্পনা ও আধুনিক পদ্ধতিতে পরিচর্যার মাধ্যমে মাছ চাষ করলে সাধারণত পাবদা মাছ চাষে লস হয় না। কিন্তু মৎস্য খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় লাভের পরিমাণ কমেছে। সম্প্রতি যে হারে মৎস্য খাদ্যের দাম বেড়েছে, সে হারে মাছের দাম বাড়েনি।
গোপালপুর এলাকার আরেক মৎস্য চাষী মাসুদ রানা বলেন, তিনি তার এলাকায় প্রথম ২০০৮ সালে পাবদা মাছের চাষ শুরু করেন। এ বছর তিনি ৪০ একর জায়গায় ২০ লাখ পাবদা মাছ চাষে দিয়েছেন। ৯ থেকে ১০ মাস চাষ করলে ১৫-১৭ টায় কেজি ওজনে আসে। কিছু দিন পর পাবদা মাছ বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন তিনি। ঐ সময় বাজার দর ভালো থাকলে এতে লাভের আশাবাদী তিনি। মাসুদ রানা সাফল্য দেখে বর্তমানে, গোপালপুরে, পলাশকান্দা, ফতেহপুর,বাউশি এলাকায় প্রায় অর্ধশত মৎস্য চাষী পাবদা মাছ চাষ করছেন।
কৃষ্ণপুর এলাকার মাছ চাষী মাউক্কুল মিয়া বলেন, তিনি পাঁচ বছর আগে পাবদা ও মাগুর চাষ দিয়ে শুরু করেন। বর্তমানে তিনি শুধু পাবদা মাছ চাষ করছেন অন্য মাছের তুলনায় লাভ বেশি ও রোগাক্রান্ত কম হওয়ায় তিনি পাবদা মাছ চাষে ঝুকেছে। তিনি বলেন, মাছের খাদ্য ও ওষুধের দাম বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে লস না হলেও লাভ বেশি হচ্ছে না। সঠিক মানের পোনা ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে পাবদা চাষ করলে লাভ হয়।
তারাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরজমিনে ঘুরে মৎস্য চাষীদের সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযোগ করেন, উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে কোন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা এবং মৎস্য চাষ সংক্রান্ত কোনো পরামর্শ দেওয়া হয় না। এমনকি মাছ কখনো রোগ আক্রান্ত হলেও মাঠ পর্যায়ে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে কোনরকম সেবা পান না।
এ বিষয়ে তারাকান্দা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুরজিৎ পারিয়াল বলেন, অফিসে জনবল সংকটের কারণে মাঠ পর্যায়ে তাদের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চাষীদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত কোন প্রকল্প না থাকার কারণে চাষীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা চাষীদের কিভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে মাছের উৎপাদন আরো বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আমরা সচেষ্ট থাকব।
উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে সাহায্য সহযোগিতা, মাছ চাষের পরামর্শ ও সঠিক মানের মৎস্য পোনা পেলে আরও অনেকে মাছ চাষে আগ্রহী হত। এতে মাছের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পেত। এতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হতো।
Leave a Reply