মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে। একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না? বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ভুপেন হাজারিকার গাওয়া সেই গান যেন বেজে উঠেছিল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মনির হোসেনের হৃদয়ে। মনিরের ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বল্প আয়ের কিছু অংশ হতদরিদ্র শারীরিক প্রতিবন্ধিদের মাঝে বিতরণ করে পরিচিত হয়ে উঠেছেন মানবিক মনির হিসেবে।প্রায় ১০০ জন প্রতিবন্ধির খাদ্য ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করে আসছেন দুই বছর ধরে। চলাচলে অক্ষম ৫০ জন প্রতিবন্ধীকে নিজ উদ্যোগে কিনে দিয়েছেন ৫০টি হুইল চেয়ার। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ব্যবসা করে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসার জন্য কয়েকজনকে দিয়েছেন নগদ আর্থিক সহায়তা।শারীরিক প্রতিবন্ধী রিনা বেগম (৪০) জানান, তার স্বামী মারা গেছেন অনেক আগেই। ছোট ছোট তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে আশুলিয়ায় এসে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মনির হোসেন দীর্ঘ দুইবছর যাবৎ তাকে সংসার চালানোর খরচ দিয়ে আসছেন, তার ছোট ছেলেকেও মাদ্রাসায় লেখা পড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন তিনি আর ভিক্ষা করেন না। সংসারে ছেলে মেয়েদের দেখা শোনা করেই তাঁর সময় কাটে।প্রতিবন্ধী সাইফুল (৪৫) বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধি হওয়ায় পরিবারের কেউ আমাকে ভালো চোখে দেখত না ,পড়ে সে নিজ এলাকা বগুড়ার শিবগঞ্জ এলাকা থেকে আশুলিয়ায় চলে আসি। পা দুটো অচল হওয়ায় রাস্তার মোড়ে বসে ভিক্ষা করতাম। পরে মনির হোসেন আমাকে দেখে একটি হুইল চেয়ার কিনে দিয়েছেন এবং প্রতি মাসে নিয়মিত আর্থিক সাহায্য দিয়ে আসছেন। তার গ্রামের বাড়ি বড়াইগ্রাম উপজেলার রামেশ্বরপুর গ্রামে তিনি করোনাকালীন শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বড়াইগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকা অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে চলে আসছেন। মনির হোসেন বলেন, আমি খুবই গরীব ঘরের সন্তান, ছোটকালে অভাবটাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। অভুক্ত থাকার যন্ত্রণা কতটা কষ্টের তা আমি উপলব্ধি করতে পারি। অনেক কষ্ট আর পরিশ্রম করে আলাহর রহমতে আজ আমি কিছুটা স্বাবলম্বী। আমার চাহিদা সীমিত, ব্যবসার আয়ের একটা অংশ আমি প্রতিবন্ধিদের জন্য খরচ করি। ওরা খেয়ে পড়ে খুশি থাকলে আমিও খুশি।
Leave a Reply