২২ এপ্রিলের সংখ্যায় ‘ছয়ঘরিয়ায় বজ্রপাতে নারী দিনমজুরের মৃত্যু’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশিত খবরের মর্মানুযায়ী মাঠে কাজ করার সময় আকস্মিক বজ্রপাতে ওই নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়।প্রতি বছর এ মৌসুমে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ে বজ্রপাতের ঘটনা। এতে প্রাণহানি ঘটে অসংখ্য। মূলত ‘ক্লাউড টু গ্রাউন্ড লাইটেনিং’ বা মেঘ থেকে মাটিতে নেমে আসা বজ্রপাতের কারণে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। বিশেষ সময় বা মৌসুমভিত্তিক বজ্রপাতের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। মৌসুমভিত্তিক মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় এখানে। বজ্রপাতে নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই কৃষক।জাতিসংঘ বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০০জন বজ্রপাতে মারা যায়। বাংলাদেশে গাছপালা কেটে ফেলা বিশেষ করে খোলা মাঠে উঁচু গাছ ধ্বংস করে ফেলা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়া এবং অসচেতনতার কারণে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে। বজ্রপাতে প্রাণহানি কমানোর জন্য তালগাছ লাগানোর প্রকল্প, লাইটনিং ডিটেকশন সেন্সর (সংকেতব্যবস্থা), লাইটনিং অ্যারেস্টার প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা সফল হয়নি।আবহাওয়াবিদদের মতে, সাধারণত উত্তপ্ত ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বজ্রপাত বেশি হয়। বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি অপর্যাপ্ত আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা এবং বড়ো বৃক্ষের অনুপস্থিতিকে বজ্রপাতজনিত প্রাণহানির কারণ হিসেবে উল্লেখ করছে।বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে দাঁড়ানো, জানালার কাছে দাঁড়ানো, ফোন চার্জে লাগিয়ে কথা বলতে বারণ করা হয়। এ সময়ে নিরাপত্তার কারণে বাড়িতে থাকারই পরমর্শ দেওয়া হয়। বজ্রপাত থেকে বাঁচার বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোনো অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না। সবচেয়ে ভালো হয় কোনো একটি পাকা দালানের নিচে আশ্রয় নেয়া। কোথাও বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে, তাই এসব স্থানে আশ্রয় নেয়া যাবে না। তাছাড়া খোলা স্থানে বিচ্ছিন্ন একটি যাত্রী ছাউনি, তালগাছ বা বড়ো গাছ ইত্যাদিতে বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা অত্যন্ত বেশি থাকে। বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি না থেকে জানালা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতর থাকতে হবে। বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা যাবে না। এমনকি ল্যান্ড লাইন টেলিফোনও স্পর্শ করা যাবে না। বজ্রপাতের সময় এগুলো স্পর্শ করেও বহু মানুষ আহত হয়। বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। এ সময় বিদ্যুৎ অপরিবাহী রাবারের জুতা সবচেয়ে নিরাপদ। বাড়িকে বজ্রপাত থেকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য আর্থিং সংযুক্ত রড বাড়িতে স্থাপন করতে হবে।বজ্রপাত থেকে রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা, মাঠে মাঠে বজ্রনিরোধক টাওয়ার নির্মাণ এবং উঁচু ও দ্রুত বর্ধনশীল গাছ লাগানো যেতে পারে। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমানোর প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে জনসচেতনতা সৃষ্টি।
Leave a Reply