দীর্ঘদিন সুন্দরবনে গরান কাঠের পারমিট বন্ধ থাকায় পচেগলে নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার মণ কাঠ। ফলে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। সেই সঙ্গে বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার বাওয়ালি। প্রতি বছর সুন্দরবনের গরান কাঠ না কাটায় গরান সমৃদ্ধ এলাকায় গাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া প্রধান কারণ গরান গাছের জন্য অন্যান্য গাছ সুন্দরবন থেকে নষ্ট এবং বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের গরান গাছ দীর্ঘদিন না কাটায় তার ডালপালা শেখর চারিদিকে ছড়িয়ে গিয়ে অন্য গাছের প্রভাব ফেলতে দিচ্ছে না সে কারণে গরান গাছের জন্য সুন্দরবনের অন্যান্য গাছ কমে যাচ্ছে দিন দিন, তাই সুন্দরবনের গরান গাছ কাটার পারমিশন দিলে সরকারের দিকে কোটি কোটি টাকার আদর্শ পাবে অন্যদিকে অন্যান্য গাছ বেঁচে থাকবে। সেই সাথে সুন্দরবনের হে তাল গাছ সরকারিভাবে অনুমতি দিয়ে কাটতে হবে তা না হলে অন্যান্য গাছের বংশ বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে,
গরান কাটার পারমিট চালু করলে একদিকে সরকার রাজস্ব পাবে অন্যদিকে শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর সুন্দরবনের ওপর দিয়ে আঘাত হানার পর ওই বছর সরকার গরান ও গোলপাতা কর্তন নিষিদ্ধ করে দেয়। দুই বছর পরে গোলপাতার পারমিট চালু করা হলেও গরানের পারমিট চালু করেনি। সেই থেকে কর্ম হারিয়ে কয়েক হাজার বাওয়ালি মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতি বছর বাওয়ালিরা নৌকা সংস্কার করে আশায় বুক বেঁধে বসে থাকে গরানের পারমিট চালু হবে এ আশায়।
কিন্তু দীর্ঘ ১৮ বছরেও গরানের পারমিট চালু না হওয়ায় অনেক বাওয়ালি পেশা পরিবর্তন করে দিনমজুরের কাজ বেছে নিয়েছে। তবে গরানের পারমিট বন্ধ থাকলেও বাওয়ালিদের কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
জানা গেছে, সত্তরের দশকে সুন্দরবনে গরান, গোলপাতা, হেতাল, গেওয়া, সুন্দরী কাঠ কাটার পারমিট দিত বন বিভাগ। নব্বইয়ের দশকের পরে শুধু সুন্দরী, গরান ও গোলপাতার পারমিটের অনুমতি প্রদান করা হতো।
পরে সুন্দরী কাঠ কাটার পারমিটও বন্ধ করে দেয়া হয়। সিডরের পর গরানের পারমিট বন্ধ করে দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা চালু করা হয়নি।
দাকোপ উপজেলার নলিয়ান গ্রামের বাওয়ালি আবু জাফর বলেন, পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের নোটাবেকি, পুষ্পকাটি, আগুনজালা, দোবেকি, কলাগাছি, জামতলা, কদমতলা ও খুলনা রেঞ্জের চালকি, আন্দার মানিক, গেওয়াখালী, পাটকোষ্টা, হংসরাজ, নীলকোমল, শোলকমনি এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ গরান গাছ রয়েছে। দীর্ঘদিন গরান না কাটায় সুন্দরবনের সর্বত্রই ব্যাপকভাবে গরানের বিস্তার ঘটেছে। এ ব্যাপারে সুন্দরবন এলাকার শ্যামনগর উপজেলার বাওয়ালি মোহাম্মদ আইয়ুব আলী বলেন সুন্দরবনের গরান গাছ ওহে তাল গাছ কাটা প্রতি জরুরি হয়ে পড়েছে তা না হলে সুন্দরবনের অন্যান্য গাছ বংশবৃদ্ধি হতে পারছে না সে কারণে গরান গাছ আর হেতাল গাছ না কাটলে সুন্দরবনের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে তিনি আরো বলেন এ বিষয়ে আমরা ইতিমধ্য একটি সংবাদ সম্মেলন করেছি এবং বোন কর্মকর্তাদের কাছে ও বোন মন্ত্রণালয় স্মারকলিপি পাঠিয়েছি মনে হয় অতি দ্রুতই একটি সুরাহ হবে,
আর ব্যাপকভাবে গরানের প্রভাব পড়ায় ওইসব এলাকায় অন্য গাছ বংশবিস্তারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অপরদিকে গরান কাঠ না কাটায় পচেগলে নষ্ট হচ্ছে এবং গরান কাঠ কাটার পারমিট না থাকায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সুন্দরবন বাওয়ালি ফেডারেশনের সভাপতি মীর কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, প্রতিবছর গরান না কাটলে সুন্দরবনের অন্য প্রজাতির গাছ বংশবিস্তারে বিঘ্ন ঘটে। দীর্ঘদিন গরান কাঠ কাটা বন্দ থাকার ফলে বয়সভিত্তিক গরান কাঠ পচেগলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বিষয়টি বিবেচনায় এনে গরান কাঠ কাটার পারমিট চালুর দাবি জানান।
এই প্রতিবেদক বলেন, গরানের পারমিটের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না পেলে গরানের পারমিট দেয়া সম্ভব হবে না। হেতাল গাছের বিষয়ে একই মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না পেলে কিছুই করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না গরান গাছ হেতাল গাছ কাটার জন্য সরকারিভাবে পারমিশন ছেড়ে মন্ত্রণালয় একাধিকবার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সরকার সাড়া না দিলে আমাদেরকে কিছু করার নেই খুলনা অঞ্চলের বোন সংরক্ষক নিহিত কুমার দে বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার বাওয়ালিদের কথা চিন্তা করে গরানের পারমিট চালু করার বিষয়টি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করবেন বলে জানান।
Leave a Reply