’আমার ছেলে সাংবাদিকতা করছে, কোনো অন্যায় করে নাই। ৫ আগস্ট সে বাড়িতে ছিল। সে নাকি ঢুলিভিটা ছিল। এরকম ডাহা মিথ্যা কথা লেখে মামলা করছে। শত্রুতা করে এই মামলা করছে,’ বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পঞ্চাশোর্ধ রাবেয়া আক্তার রুবিয়া। তিনি ঢাকার ধামরাইয়ে কর্মরত সাংবাদিক মনোয়ার হোসেন রুবেলের মা। গত ২২ অক্টোবর ঢাকা জুডিশিয়াল (ধামরাই) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলার আবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার নাম।
এ মামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে এক মানববন্ধন আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে মনোয়ার হোসেনের পরিবারের সদস্যসহ অন্তত পাঁচ শতাধিক স্থানীয় লোকজন ও শতাধিক সাংবাদিক অংশ নেন। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা ছড়িয়ে যায় এ মানববন্ধন।
এ সময় তারা, ’রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা, প্রত্যাহার করতে হবে’, ’অবৈধ মামলা, বাতিল চাই, করতে হবে’, ’সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মানববন্ধনে অংশ নেন ষাটোর্ধ কহিনুর বেগম। মনোয়ার হোসেন রুবেলের প্রতিবেদনের পরে সরকারি সহযোগিতা পেয়েছিলেন তিনি। কহিনুর বেগম বলেন, ’আমাগো বিপদআপদে সবসময় রুবেল থাকে। ওর নামে মামলা করছে। হুইনাই কইলজাডা পুড়তাছে। তাই আইছি। এই মামলা বাদ দিতে অইবো।’
এতে অংশ নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তার বাবা ইসমাইল হোসেন। তিনি অবিলম্বে এ মামলা থেকে রুবেলের নাম প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এর আগে, সকালের দিকে উপজেলার থানা রোড এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে ধামরাই প্রেস ক্লাব আয়োজিত এক বিক্ষোভে প্রায় অর্ধ শতাধিক সাংবাদিক অংশ নেন।
এতে বক্তারা বলেন, সাংবাদিক মনোয়ার হোসেন রুবেল ও সাংবাদিক রাজন আহমেদ দীর্ঘ দিন ধরে সুনামের সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তারা অবিলম্বে এ মামলা থেকে দুই সাংবাদিকের নাম প্রত্যাহারে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে জানান সাংবাদিক নেতারা।
মানববন্ধন শেষে সাংবাদিক নেতা থানা পুলিশের সঙ্গে দেখা করেন।
গত ২২ অক্টোবর ঢাকা জুডিশিয়াল (ধামরাই) আদালতে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বেনজির আহমদসহ ৯০ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়। এতে ৩৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে সাংবাদিক মনোয়ার হোসেন রুবেল ও ৮৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে সাংবাদিক রাজন আহমেদকে। মামলার তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানান স্থানীয় সাংবাদিকরা।
মামলার বাদি জুয়েল তালুকদার (৩০) ধামরাই পৌরসভার দক্ষিণপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের আথাইল শিমুল এলাকার জালাল তালুকদারের ছেলে।
তবে এ ঘটনায় মামলার বাদীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, একটি মামলার কথা শুনেছি। তবে এখনও আদালতে এ সংক্রান্ত নথি পৌঁছেনি। এখনও থানায় এমন কোনো মামলা রুজু হয়নি।
Leave a Reply