লাভ হওয়ায় কুষ্টিয়ার চাষিরা সপরিবারে তামাক চাষ করছেন। এমনকি বাড়ির শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে তামাক চাষে। তারা ধান, গম বা ভুট্টা চাষ কমিয়ে তামাক চাষের প্রতি বেশি ঝুঁকছেন। জেলার দৌলতপুর, মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার চাষিরা তামাকের খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও অধিক মুনাফা লাভের আশায় তামাকের কাজ করছেন নারী, বৃদ্ধ ও শিশুরা।
বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি, ঢাকা ট্যোবাকো, জাপান ট্যোবাকো, আবুল খায়ের ট্যোবাকো, নাসির ট্যোবাকো, আকিজ ট্যোবাকোসহ বেশ কয়েকটি তামাক কোম্পানি বীজ, সার ও অগ্রিম ঋণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তামাক চাষে চাষিদের আগ্রহী করে তুলছে। এ কোম্পানিগুলোর আর্থিক সহযোগিতা, বিনামূল্যে বীজ, ঋণে সার ও নগদ অর্থসহ তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তার কারণে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হলেও তামাক কোম্পানির লোভনীয় আশ্বাসের কারণে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। কৃষকদের তামাক চাষের কুফলগুলো বোঝাচ্ছেন এবং তামাকের বদলে অন্যান্য ফসল চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, কুষ্টিয়ার ৬ উপজেলার মধ্যে দৌলতপুর, ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি তামাক চাষ করা হয়। অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও তামাক চাষ হয়ে থাকে। ২০১৯-২০ সালে দৌলতপুর, ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলায় তামাক চাষ হয়েছিল ১০ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। পরের বছর ২০২০-২১ সালে তামাক চাষ হয়েছিল ১০ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে, ২০২২-২২ সালে ১১ হাজার ৯২০ হেক্টর, ২০২২-২৩ সালে ১০ হাজার ৭৭১ হেক্টর এবং চলতি বছরে ১০ হাজার ৯৩১ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে দৌলতপুর উপজেলায় ৩ হাজার ৬৯৬ হেক্টর, ভেড়ামারায় ৭৮০ হেক্টর এবং মিরপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। মিরপুর উপজেলায় কৃষি জমি ২৩ হাজার ১১১ হেক্টর, ভেড়ামারায় ১০ হাজার ৮৯১ হেক্টর এবং দৌলতপুর উপজেলায় কৃষি জমি রয়েছে ৩২ হাজার ৪৪৮ হেক্টর।
জেলার দৌলতপুর, মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তামাক ক্ষেত। ক্ষেতে কেউ তামাকগাছের পরিচর্যা করছেন, কেউ নষ্ট পাতা কাটছেন। আবার কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তামাক ক্ষেতে সার দিচ্ছেন। কেউ কেউ তামাকের পাতা মাঠ থেকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন, কেউ তামাক শক্ত লাঠির সঙ্গে বাঁধছেন। তামাক পোড়ানো ও প্রক্রিয়াজাতের কাজ করছেন নারী, বৃদ্ধা ও শিশুরা।সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কখনও অন্য ফসল উৎপাদনের জন্য এধরনের এতো উদ্যোগ দেখা যায় নি। এসব কারণেই কৃষকরা তামাক চাষে ঝুঁকছেন।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে তামাকের চাষ হয়। তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ যথেষ্ট আন্তরিক ও তৎপর। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে ধান, ভুট্টা, গম, আলুসহ ফল চাষে নানা পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কৃষকদের সরকারি প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা সচেতন হলে তামাক চাষ থেকে বেরিয়ে আসবেন।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি তামাক চাষ হয়। দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, তামাক স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তামাকের গুঁড়া বাতাসের সঙ্গে মানুষের শ্বাসনালি দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। তামাক ফুসফুসের ক্ষতি করে। এই তামাকের কারণে মানুষের ব্রংকাইটিস, এজমা, টিবিসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। এধরণের রোগীরা অনেকেই তামাক উৎপাদন বা তামাকের কাজ করে। তামাকের কাজ করলে রোগে আক্রান্ত হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যায় না।
Leave a Reply