শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান। যার তত্ত্ববধান করে টাঙ্গাইল পৌরসভা। কবি নজরুল সড়ক ও ক্লাব রোডের পাশে অবস্থিত এই উদ্যান। বৃটিশ আমলে এটি ছিলো পুলিশ প্যারেড ময়দান।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র জমা নিতে টাঙ্গাইল আসেন তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।ওইদিনই তিনি পুলিশ প্যারেড ময়দানে শহীদ স্মৃতি সৌধের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন।পরবর্তীতে পৌরসভা নব্বই দশকে সেখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে।তখন এর নামকরণ করা হয় শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান।
একসময় টাঙ্গাইল শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানটি ছিল শরীর সচেতন বয়স্ক মানুষের হাটার বা ব্যায়ামের জায়গা।এছাড়াও এই পৌর উদ্যান ছিল শিশু-কিশোরদের খেলার জায়গা, যাদের অনেকেরই খেলাধুলার হাতে খড়ি হয়েছে এখানে।
টাঙ্গাইল যেহেতু সাংস্কৃতিক নগরী হিসেবে পরিচিত, তাই শহরের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে নির্মাণ করা হয় মুক্তমঞ্চ।কিন্তু মুক্তমঞ্চটি হয়ে উঠলো রাজনৈতিক সভা সেমিনারের কেন্দ্রস্থল।
উদ্যানের ভেতরে একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ করে প্রায় ২৫ ভাগ জায়গা ভর্তি করে ফেলা হয়েছে।এখন উদ্যানে নেই হাটার জায়গা, নেই শিশু-কিশোরদের কোলাহল। এখন এই উদ্যান শুধুই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জায়গা। সারাবছরই চলে ক্ষমতাসীন দল, প্রসাশনের কর্মকাণ্ড।
এর বাইরে যদি সময় পাওয়া যায় হঠাৎ করে, তখন চলে অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যক্রম।
এছাড়া সারাবছর পৌর উদ্যানে গাড়ি পার্কিং, ডেকোরেটরের মালামাল মজুত করে রেখে সাধারণ মানুষের হাটাচলা বা বসার জায়গাগুলোও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।
উদ্যানটির আয়তন ছিলো প্রায় ৫৬ হাজার বর্গফুট। বিভিন্ন গাছগাছালিতে ভরা উদ্যানে মানুষ অবসরে বিশ্রাম নিতো।২০১২ সালে পৌরসভা উদ্যানের পূর্বপাশে বড় অংশ জুড়ে মুক্তমঞ্চ, সাজঘরসহ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করে।পরে জেলা পরিষদ মুক্তমঞ্চের পাশে ম্যুরাল তৈরি করে। এসব নির্মাণের কারনে প্রায় ১৮ হাজার বর্গফুট চলে যায়।এ বছর সড়ক সম্প্রসারণের জন্য উদ্যানের পশ্চিম পাশের প্রায় দেড় হাজার বর্গফুট জায়গা পৌর কর্তৃপক্ষ নিয়ে নেয়। এর বাইরেও ক্লাব রোড সম্প্রসারণের জন্য উদ্যানের জায়গা নেওয়া হবে বলে পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এখন উদ্যানের পশ্চিম-উত্তর পাশে সাড়ে নয়শ বর্গফুট জায়গা জুড়ে গণশৌচাগার নির্মাণ কাজ শুরু করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
ফলে আরো ছোট ও সাধারণ মানুষের ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে উদ্যানটি।
উদ্যানে আসা অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম জানান, এ জায়গাটিতে শহরের মানুষ একটু স্বস্তির জন্য আসেন।কিন্তু দিন দিন এটি ছোট হচ্ছে। মুক্ত বাতাস গ্রহণের স্থান ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে।
সকালে হাঁটতে আসা পশ্চিম আকুরটাকুর পাড়ার বাসিন্দা সৌমিত্র বলেন, আগে উদ্যানে সকাল বিকাল হাটতে আসতাম। এখনতো উদ্যানে আগের মত আর হাটার জায়গা নাই।চায়ের দোকান, অমুক দোকান, তমুক দোকান, তাছাড়া আরো কতো কি রয়েছে। সেজন্য বিকেলে এখন আর আসি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই বলেন, এখানে যে গণশৌচাগার নির্মাণ করা হচ্ছে ব্যবসায়িক স্বার্থে। এটাকে লিজ দিয়ে মোটা একটা টাকা নিবে।এছাড়া সারাবছরই এখান থেকে একটা আয় হবে, সেই চিন্তা থেকেই এই গণশৌচাগার নির্মাণ করা হচ্ছে।
নাট্যকর্মী বিপ্লব দত্ত পল্টন জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেখানে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন তার পাশেই গণশৌচাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা।বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজরিত স্থানটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। সেই সাথে যত্রতত্র স্থাপনা না করে উদ্যানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
Leave a Reply