প্রায় পাঁচ থেকে সাত বছর সংস্কারের মুখ দেখেনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে অবস্থিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ীটি। ইতিমধ্যে ঘুন লেগেছে চুন-সরকির তৈরি দোতলা বিশিষ্ট কুঠিবাড়ীর দরজা-জানালার চৌকাঠে। খসে পড়ছে দেওয়াল ও ছাদের পলেস্তারা। ভেঙে পড়েছে দুইটি বেলকুনি ও জানালার অংশ বিশেষ। দোতলায় একসঙ্গে বেশী দর্শনার্থী উঠলে সৃষ্টি হয় কম্পন। চটে গেছে রঙ। ফলে ধীরে ধীরে প্রায় ভগ্নদশার পথে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী। কর্তৃপক্ষ বলছেন, অর্থ বরাদ্দ না থাকায় প্রায় পাঁচ থেকে সাত বছর সংস্কার করা হয়নি কুঠিবাড়ীটি। আর দর্শনার্থীরা বলছেন, সংস্কারের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের কুঠিবাড়ীতে বাড়তি বিনোদন ও সময় কাটানোর জন্য রবীন্দ্র সাহিত্যকর্মের উপর থিয়েটার ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা দরকার। এছাড়াও কবির স্মৃতিবিজড়িত বজরায় নৌকাটি খুঁজছেন তাঁরা। শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীর কাস্টোডিয়ানের কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ১৮৯১ সালে বাবার আদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোলকাতা থেকে জমিদারি তদারকির কাজে শিলাইদহে এসেছিলেন। সে সময় তিনি জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের পুরানো কুঠিবাড়ীতে বাস করতেন। পরে পদ্মার ভাঙনে পুরানো কুঠিবাড়ীর নিকটবর্তী এলাকা পর্যন্ত বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে পুরানো বাড়িটি ভেঙে নতুন কুঠিবাড়ীটি নির্মাণ করা হয় ১৮৯২ সালে। ওই বাড়ী তৈরির দায়িত্বে ছিলেন কবির জ্যেষ্ঠভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৃতীয় পুত্র নীতিন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর। পরে কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাড়িটির বর্তমান রূপ দেন। প্রায় ১৫ দশমিক ৯৩ একর জমির কুঠিবাড়ীতে আম, কাঁঠাল ও অন্যান্য চিরসবুজ বৃক্ষের বাগান রয়েছে। আছে পুষ্পোদ্যান, চারটি পুকুরসহ মনোরম পরিবেশ। আরো জানা গেছে, গত অর্থবছরে সরকার কুঠিবাড়ী থেকে রাজস্ব পেয়েছেন প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব অর্জনের লক্ষমাত্রা রয়েছে ৪০ লক্ষ টাকা। দুইমাস আগেই রাজস্ব অর্জন হয়েছে প্রায় ৩৯ লক্ষাধিক টাকা। ধারণা করা হচ্ছে এবছর লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে রাজস্ব আদায় হবে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা। শনিবার (১৩ মে) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অপূর্ব কারুকাজ সমৃদ্ধ দোতলা কুঠিবাড়ী ভবনের দেওয়াল ও ছাদের বিভিন্নস্থানের পলেস্তারা খসে পড়েছে। প্রায় ১০ টি জানালা ও ৭ টি দরজার চৌকাঠে ঘুন লেগেছে। দুইটি বেলকুনি ও কয়েকটি জানালার অংশ বিশেষ ভেঙে গেছে। চটে গেছে ভবন ও প্রাচীরের রঙ। এসময় খুলনা থেকে আশা দর্শনার্থী আরিফ শেখবলেন, কুঠিবাড়ীটি তিনি ঘুরেঘুরে দেখেছেন ও ছবি তুলেছেন। তাঁর খুব ভাল লেগেছে স্থানটি। তবে ভবনে কম্পন থাকায় ভয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠেননি তিনি। তাঁর ভাষ্য, প্রায় একঘণ্টার মধ্যে কুঠিবাড়ীর সকল সুন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব। কিন্তু লঙ টাইম (দীর্ঘসময়) কাটানোর জন্য থিয়েটার বা নতুন কিছু যোগ করা দরকার। আরেকজন দর্শনার্থী সালমা ইসলাম বলেন, কবির স্মৃতিবিজড়িত স্থানটির সবটুকু তিনি পরিদর্শন করেছেন। ঘুরেঘুরে তিনি কবির ব্যবৃহত চেয়ার, টেবিল, পালকি, কবির সেসময়ের ছবিসহ নানান কিছু দেখেছেন। তবে কবির ব্যবহৃত বজরায় নৌকাটি তিনি খুঁজে পাননি। স্থানীয় সাংবাদিক মনোয়ার হোসেন বলেন, দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিনই শতশত দর্শনার্থী কুঠিবাড়ীতে বেড়াতে আসেন। কিন্তু সংস্কারের অভাবে কুঠিবাড়ীটি আজও অবহেলিত। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে নতুন করে সংস্কারের দাবি জানান তিনি। শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীর কাস্টোডিয়ান আল আমিন বলেন,বরাদ্দ না থাকায় প্রায় পাঁচ থেকে সাত বছর সংস্কার হয়নি কুঠিবাড়ীতে। ফলে কিছু দরজা-জানালার কাঠে ঘুন ধরেছে। বেলকুনি ও জানালার কয়েকটা অংশ ভেঙে পড়েছে। একসাথে বেশি দর্শনার্থী দোতলায় উঠলে ভবনে কম্পন সৃষ্টি হয়। সংস্কারের জন্য সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রতি মাসিক সভায় তিনি বিষয়টি উত্থাপন করে থাকেন। তিনি আরো বলেন, চলতি অর্থবছরে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে। সংস্কারের ব্যাপারে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, গতবছর তিনি কুঠিবাড়ী পরিদর্শন করেছেন। সময় স্বল্পতার কারণে চলতি অর্থবছরে সংস্কারের বিষয়টি উত্থাপন করতে পারেননি। তবে তিনি প্রত্যাশা করছেন ২০২৩ -২৪ অর্থবছরে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হবে
Leave a Reply