প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারজুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বাংলাদেশে। দুর্গম এই বন রক্ষায় বন বিভাগের যেসব রক্ষী দায়িত্ব পালন করেন, তাদের নিরাপত্তাহীন জীবন। তাদের নেই আধুনিক নৌযান ও সরঞ্জাম, নেই চিকিৎসার ব্যবস্থা। ফলে ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনে বিচরণ করেন তারা।
বনরক্ষীরা বলছেন, সুন্দরবনের একাংশ থেকে অন্য অংশে যেতে জলপথই একমাত্র ভরসা। কিন্তু সুন্দর এই বন ঘিরে অনেক অপরাধ সংঘটিত হয়। কাঠ চুরি করে নিয়ে যায় স্থানীয় প্রভাবশালীচক্র। হরিণ শিকার করে কেউ কেউ। কিন্তু বন বিভাগের তেমন কোনো দ্রুতগামী জলযান নেই যা রয়েছে তাও তেলের অভাবে চালানো যায় না। এ অবস্থায় যেসব বনরক্ষী গভীর বনে দায়িত্ব পালন করেন, তারা সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে লোকালয়ে এনে চিকিৎসা করাটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। জেলেদের মাছ ধরা ট্রলারের অপেক্ষায় থাকতে হয় লোকালয়ে এসে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। আবার কখনো কখনো তাদের খাবারও শেষ হয়ে যায়। তখন জেলেদের কাছে থেকে খাবার নিয়ে তাদের বেঁচে থাকতে হয়। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। আবার রেশন ও অন্যান্য সুবিধাও পান না তারা। নেই আধুনিক নৌযান ও সরঞ্জাম। ফলে ঝুঁকি নিয়ে অভিযান চালান তারা খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছেন একজন বন সংরক্ষক। দুটি বিভাগীয় অফিসের দায়িত্বে আছেন দুইজন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও)। এই দুটি বিভাগের (পূর্ব ও পশ্চিম) চারটি রেঞ্জের আওতায় ১৬টি স্টেশন ও ৬৩টি টহল ফাঁড়ি রয়েছে। সেগুলো বন্যা ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বনরক্ষীদের জন্য নিরাপদ নয়। সুন্দরবনের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান এই প্রতিবেদককে,য় বলেন, আধুনিক নৌযান না থাকায় অভিযান চালাতে সমস্যায় পড়তে হয় বনরক্ষীদের। সে ক্ষেত্রে অপরাধীদের দ্রুতগামী নৌযান রয়েছে। আমাদের যেসব নৌযান আছে, সেগুলো অপরাধীদের দ্রুতগামী নৌযানের সঙ্গে পেরে ওঠে না। এজন্য অপরাধীদের ধরতে গিয়ে পিছিয়ে পড়তে হয় রক্ষীদের।
তিনি আরো বলেন, বনরক্ষীদের আছে বহু পুরোনো চাইনিজ রাইফেল এবং এসএলআর। অথচ সুন্দরবনের দস্যুদের রয়েছে আধুনিক অস্ত্র। বুড়িগোয়ালীনি স্টেশন অফিসার,জিয়াউর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেও বাড়তি সুযোগ পান না তারা। কম বেতন পান। নেই রেশনিং ব্যবস্থা ও ঝুঁকি ভাতা। তাদের জীবন অনেকটাই অনিরাপদ। অনেকটা দুঃখে-কষ্টে চলতে হচ্ছে তাদের।
তারা আরো জানান, গহীন বনের ফাঁড়িগুলো থেকে লোকালয়ে এসে ওষুধপত্র ও প্রয়োজনীয় বাজার করতে হয়। বন্যা হলে তারা বনের ফাঁড়িগুলোতে থাকতে পারেন না। এখানে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের অর্থনীতিতে সুন্দরবনের অবদান প্রতি বছর প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এজন্য সুন্দরবন রক্ষা ব্যবস্থা ও রক্ষীদের আধুনিকায়ন করতে চান তারা।
পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় কর্মকর্তা কাজী নুরুল করিম এই প্রতিবেদককে বলেন বলেন, সুন্দরবন সুরক্ষায় দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের লোকবল সংকট আছে। আধুনিক নৌযানের সংকট দীর্ঘদিনের। এজন্য আধুনিক নৌযান যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বনরক্ষীদের আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। সুন্দরবন রক্ষায় নিয়োজিত বনরক্ষীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার এমনটি জানালেন পরিবেশ, শ্যামনগর-উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাম্মাৎ রনি খাতুন বলেন আগের তুলনায় বনরক্ষীদের সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে।
সুন্দরবন সুরক্ষা ও ইকোট্যুরিজম প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবন ও বনরক্ষীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ চলছে।
Leave a Reply