কুষ্টিয়ার চর ঘোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে। পদ্মার চরাঞ্চলে শিক্ষার আলো জ্বালানো এটাই প্রথম স্কুল। বর্তমানে বিদ্যালয়টি পদ্মা নদী থেকে ৫ মিটার দূরে আছে।
স্কুলের দুপাশে বেশখানিক ভেঙে পড়েছে। যেকোন মুহূর্তে বিদ্যালয়টি ভেঙে নিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর। পরিস্থিতি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা ঘুরে দেখলেও পানি ও স্রোতের চাপ বেশি থাকায় কিছুই করতে পারছেন না বলে জানা গেছে। তবে স্কুলটি আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত সেই কারণেও এটি চালু রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছেন জেলা প্রশাসন।
পদ্মা নদীর ওপারে কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার চর সাদীপুর ইউনিয়ন। চরাঞ্চলের মানুষ যাতে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে সে লক্ষ্যে চর ঘোষপুরে ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চর ঘোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।
পদ্মা নদী থেকে অনেক দূরে প্রতিষ্ঠা করা হয় বিদ্যালয়টি। শিক্ষার মান উন্নয়নে ২০০০সালে নতুন ভবন নির্মান করা হয়। তবে গত ২০ বছর ধরে নদীর পাড় ভাঙতে ভাঙতে এখন নদীর সিমানা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে। ইতিমধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে স্কুলের পুরাতন ভবনটি। নদীর সিমানা ঘেষে যে ভবনটি দাড়িয়ে আছে এটি নতুন ভবন।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান বলেন, আর মাত্র ৫মিটার দূরে আছে স্কুলটি। এখন নদীতে পানি ও স্রোত বেশি থাকায় জিও টিউব বা জিও ব্যাগ ফেলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন এখানে পানির পরিমাপ করে উচ্চতা ১০ মিটার আরএল পাওয়া গেছে।
পানি কমে আসলে জিও টিউব ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো। তিনি বলেন, শুধু ঘোষপুরে এই বিদ্যালয়ের কাছেই নয়, কুষ্টিয়ার অন্তত: ১০টি পয়েন্টে পদ্মানদী ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে কৃষকের ফসলি জমি। এসব ভাঙন প্রতিরোধে ব্যাবস্থা নিচ্ছেন তারা।
চর ঘোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল আওয়াল জানান, গত দুই দিনে পানি কিছুটা কমেছিল। ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার আবার বেড়ে গেছে। স্কুলে আজও পাঠদান চালু রয়েছে, তবে কতদিন রাখা যাবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি।
চর সাদীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেসের আলী খাঁ বলেন, শুধু এই স্কুল নয়, এখানে মসজিদ, রাস্তা ও কৃষকের জমি ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে নদী। এখানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মানের দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমাদের সন্তানদের পড়ার জন্য এই এলাকায় একটিই বিদ্যালয়। এটি ভেঙে গেলে ছেলেমেয়েরা কোথায় লেখাপড়া করবে’ তারা দাবি করেন স্কুলটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার। তারা বলেন, নদীর কুলে স্কুল থাকলে শিশুরা নদীতে পড়ে ঢুবে যেতেও পারে।
বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চিন্তা জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজার। তিনি বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র হিসেবে এটি নির্বাচন করা হয়েছে। এ কারণে এই বিদ্যালয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে যাতে জরুরি ভিত্তিতে এখানে কাজ করা হয়।
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অবগত করা হয়েছে। প্রয়োজনে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম অন্যত্র নেওয়া হবে’ যাতে শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে পাঠদান করতে পারে।
Leave a Reply