কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার নারী শিক্ষার সর্বোচ্চ শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি বঙ্গমাতা মহিলা কলেজ। এ কলেজে সাম্প্রতিক শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ পাওয়া যায়, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রভাষক (মুহাম্মদ শাহে আলম) তার ইনডেক্স নং- ৩০৮০১৮৭ তিনি তথ্য গোপন করে বিগত ২৭/৭/২০০০ সালে অত্র কলেজে ইতিহাসের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ইতিপূর্বে তিনি ১৯৯৫ সাল হতে ২০১০ সালে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং আল-আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এমপিওভূক্ত শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। যার ইনডেক্স নং-১৩৯১০৫। তিনি ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন। ২০১০ সালে আল আছিয়া থেকে পদত্যাগ করে চলে আসেন। এরপর উখিয়া বঙ্গমাতা সরকারি মহিলা কলেজে কোন ধরনের নিয়োগ প্রদান না নিয়ে কিভাবে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
জানা যায়, এমপিও নীতিমালার ১২নং নির্দেশিকা মতে পূর্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রদত্যাগ করে প্রদত্যাগ পত্র নতুন প্রতিষ্ঠানে জমা দিয়ে যোগদান করার বিধান থাকলেও তিনি প্রদত্যাগ করেননি তথ্য গোপন করে যোগদান করেন। এমপিও নীতিমালার ১২নং নির্দেশিকা মতে তার যোগদান অবৈধ। এমপিও নীতিমালার ১১নং নির্দেশিকার ১৩নং অনুচ্ছেদ এ উল্লেখ আছে একই ব্যক্তি দুই প্রতিষ্ঠানে একই সময়ে চাকরি করতে পারবেন না। এমপিও নির্দেশিকার ১২নং শর্তে উল্লেখ আছে পূর্ব প্রতিষ্ঠান এবং নতুন প্রতিষ্ঠানে দুই বছরের ব্যবধান হলে ইনডেক্স বাতিল হবে। তার দুই প্রতিষ্ঠানের ব্যবধান ১১ বছর, সুতরাং তার পদত্যাগ পত্র নতুন প্রতিষ্ঠানে গ্রহণ যোগ্য নয়। তাকে নতুন করে নতুন ইনডেক্স এ যোগদান করতে হতো, তিনি তা না করে ২০০০খ্রীঃ থেকে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজে কর্মরত দেখিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়েছেন যা বিধি সম্মত নয়। এনিয়ে উখিয়া সচেতন মহলের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া তাহমিনা খানম, সমাজ বিজ্ঞান, ইনডেক্স নং-৩০৮০১৮৫, ২৯/০৭/২০০০ইং সালে উক্ত কলেজে যোগদান করেন। ২০০১ সালে নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলে কলেজটি এমপিওভূক্তি হবে না বলে চলে গিয়ে তিনি কক্সবাজার আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে যোগদান করেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি আবারো বঙ্গমাতা কলেজে চলে আসেন। এখন তাকে কেউ নতুন ভাবে নিয়োগ প্রদান করেনি।
অপরদিকে ছন্দা চৌধুরী, প্রভাষক, অর্থনীতি, ইনডেক্স নং-৩০৮০১৮৬, সেও ২৯/০৭/২০০০ইং সালে কলেজে যোগদান করেন। যোগদানের পূর্ব থেকে তিনি কক্সবাজার এয়ারপোর্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে চাকুরি করেন। তথ্য গোপন করে ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে বঙ্গমাতা মহিলা কলেজ থেকে পদত্যাগ করে কক্সবাজার আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে যোগদান করেন।
এছাড়া নার্গিস সুলতানা, প্রভাষক, যুক্তিবিদ্যা, ইনডেক্স নং-৩০৮০১৮৮, সে ২০০০ সালে উক্ত প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে অত্র কলেজ থেকে পদত্যাগ বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত উখিয়া গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে যোগদান করেন।
সর্বশেষ প্রভাষক জাফর আলম, ইসলাম শিক্ষা, ইনডেক্স নং-৩০৮০১৯০, তাকে ২০০৪ সালে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এ সময় কলেজের কোন ধরনের কমিটি ছিল না। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী ৫টি মামলার চার্জসীট গৃহীত হয়। মৈত্রী বড়ুয়া ও হেলাল উদ্দিনসহ উল্লেখিত শিক্ষকদের নিয়োগের সময় কলেজে কোন ধরনের কমিটি ছিলনা। মিথ্যা বানোয়াট কমিটি দেখিয়ে উক্ত কলেজে তাদেরকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এছাড়া কলেজের বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রভাষক শাহে আলম ও হেলাল উদ্দিন মিলে আত্মসাৎ করেন। যার প্রমাণ টিনসেট ভবন মেরামতের নামে টিন না দিয়ে ত্রিপল দিয়ে মেরামত করা হয়। অপরদিকে কলেজের কোচিং, সার্টিফিকেট ও প্রশংসা পত্র বিক্রির টাকা কলেজ হিসাব একাউন্টে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করার গুরুতর অভিযোগ আছে।
এ সমস্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য দূর্ণীতি দমন কমিশনের স্মারক নং-০০০১০০০০৫০৩২৬১১৫২২/১৫৪৩৫ মূলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম করার তথ্য সঠিক পাওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এর মহাপরিচালককে নির্দেশ প্রদান করেন। মন্ত্রী পরিষদ সচিব অত্র অভিযোগ ০৪০০০০০০৪১৬, ২৭০০৩, ৫৫৬, তারিখ-২৪/০৭/২০২২, স্মারক নং- তদন্ত করার জন্য স্মারক নং-০৪০০০০০০৪১৬, ০৪০০০০০০, ৪১৬২৭, ০০১, ২৩, ২০০৮, ২৯ মার্চ ২০২৩ স্মারকে, সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করলেও এ পর্যন্ত ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ব্যাপক অনুসন্ধানে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রভাষক শাহে আলম জানান, আমি আল আছিয়া স্কুলে ২০১০ সাল পর্যন্ত এমপিওভুক্ত ছিলাম, ২০১০ সালে আল আছিয়া স্কুল থেকে পদত্যাগ করে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজে চলে আসি। অন্যান্য অভিযুক্তরাও বলেছেন আমরা ভিন্ন কলেজ ও স্কুলে চাকুরী করলেও ২০১০ সালে পদত্যাগ করে উখিয়া বঙ্গমাতা মহিলা কলেজে ফিরে আসি। এখন এসব যা করা হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে সব অপপ্রচার।
এব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর নিহাল আহমদ জানান, অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দোষী সাব্যস্ত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply