আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেখা গেছে সেনাবাহিনীর তৎপরতা। উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর চেকপোস্টে এপিবিএনের পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছে সেনাসদস্যরা।
সেনাবাহিনীর উখিয়া সমন্বয়কারী সেলের প্রধান কর্মকর্তার (টাস্ক গ্রুপ কমান্ডার) দায়িত্ব পালন করছেন লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আশফাকুর রহমান (এসজিপি, পিএসসি)।
সেলটির অফিসার ইন চার্জের দায়িত্বে আছেন ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মঈনুল হাসান অনিক, যিনি ক্যাম্প কমান্ডার হিসেবে উখিয়ার ১১ টি ক্যাম্প যথাক্রমে- কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং ১ ইস্ট ও ওয়েস্ট, ২ ইস্ট ও ওয়েস্ট, ৩,৪, ৪ এক্সটেনশন, ৫, ৬,৭, নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় সমন্বয় করবেন।
মুঠোফোনে তিনি জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা রক্ষায় সেনা সদস্যরা নিয়োজিত আছেন এবং চেকপোস্ট ও ক্যাম্পগুলোর আশেপাশে টহল জোড়ালো রাখার পাশাপাশি নিরাপত্তা জনিত যেকোনো প্রয়োজনে সহযোগিতা করবে সেনাবাহিনী।
এছাড়াও ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন মুশফিকুশ সালেহীন রাফি উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ৮ ইস্ট ও ওয়েস্ট, ৯, ১৭, ১৮, ২০ ও ২০ এক্সটেশন রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং ক্যাম্প কমান্ডার লেফটেন্যান্ট সাদমান সামিত লিপু ১০,১১,১২ ও ১৩ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এর দায়িত্ব পালন করবেন।
১৪,১৫ ও ১৬ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বে আছেন ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন নুরুন্নবী এবং টেকনাফ উপজেলায় ২১ ও ২২ নং ক্যাম্পে ক্যাম্প কমান্ডার মোহাম্মদ মোহায়মানুর রহমান ও ক্যাম্প কমান্ডার মোহাম্মদ খালিদ হাসান মুগ্ধ’কে নয়াপাড়া নিবন্ধিত ক্যাম্প, ২৪, ২৫, ২৬ এবং ২৭ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, পুলিশের প্রাতিষ্ঠানিক ও কেন্দ্রীয় কাঠামোর কার্যকারিতা শুরু হওয়ার সাথে সাথে কর্ম উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাটির বিশেষ ইউনিট আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন (এপিবিএন) এর ৮, ১৪ ও ১৬ ব্যাটেলিয়নের পুলিশ ক্যাম্পগুলোতে।
পুলিশের অনেক সদস্য কর্মবিরতিতে গেলেও ক্যাম্প ছাড়েননি উচ্ছপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অধিকাংশ এপিবিএনের সদস্যরা, তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থার স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে কাজ করছেন।
বুধবার বিকেলে উখিয়ার একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই সশস্ত্র গ্রুপের মাঝে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটলে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এপিবিএন।
এপিবিএন এর অধিনায়ক (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) জনাব মোঃ আমির জাফর বলেন,
“সেনাবাহিনী ও রোহিঙ্গা মানবিক কর্মসূচি’র সকল দেশী-বিদেশী অংশীদারজনদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে ক্যাম্প এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে, প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে পুলিশ ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করে সবার সাথে মতবিনিময় করছি। “
এনজিও প্লাটফর্ম সূত্রে জানা গেছে, সকল ক্যাম্প ইনচার্জবৃন্দ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সিআইসি কার্যালয়ে উপস্থিত থাকবেন এবং কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই পরিচালনা করা হবে।”
চলমান পরিস্থিতির সুযোগে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ ও নতুন করে অনুপ্রবেশ নিয়ে শংকায় থাকা স্থানীয়রা মনে করেন, স্বাভাবিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার সমন্বিত সক্রিয়তার বিকল্প নেই।
এদিকে বুধবারও মিয়ানমারে সংঘাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় নাফ নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় ২১ জন রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় এ নিয়ে টেকনাফে গত দু’ দিনে এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হলো।
রোহিঙ্গাদের রাখাইনে যুদ্ধরত দুই পক্ষ – আরকান আর্মি এবং জান্তা বাহিনী নিপীড়ন করছে বলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করছে।
বাংলাদেশের অস্থিরতার চেয়েও নিজেদের উপর চলা নিপীড়ন নিয়েই উদ্বিগ্ন রোহিঙ্গারা। রাখাইন সংকট সমাধানে ক্যাম্পে কাজ করা অধিকাংশ রোহিঙ্গা অধিকারকর্মীর মতামত বলছে,
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার ও বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলোর উপর চাপ প্রয়োগ করে রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন বন্ধ করতে হবে এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা জরুরি।
Leave a Reply