লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যেন কাঠ পোড়ানোর মহোৎসবে মেতেছেন ভাটার মালিকরা।
ভাটার মালিকরা কাঠ ও টিনের চিমনি ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে ইট। এসব কাঠ সামাজিক বনায়ন থেকে সংগ্রহ করায় হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। ফসলি জমি ও জনবসতিপূর্ণ এলাকা কাছে থাকায় কালো ধোঁয়া এবং দূষণে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। এ ভাটার কারণে জমির ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ইটভাটার সামনেই স্থাপন করা হয়েছে করাতকল।
অধিকাংশ ইটভাটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ইটভাটার মালিকরা গত কয়েক মাস ধরে হাজার হাজার মন কাঠখড়ি সংগ্রহ করে তাদের ইট ভাটার নির্দিষ্ট স্থানে মজুদ করেছে। এখনও কাঠ খড়ি সংগ্রহ অব্যহত রয়েছে। আইনের তোয়াক্কা না করে কাঠখড়ি দিয়ে নির্বিঘ্নে পোড়ানো হচ্ছে ইট।
আর এ ভাবেই চলতে থাকবে ইট পোড়ানোর পুরো মৌসুম। ব্যাঙের ছাতার মতো ইটভাটা গড়ে উঠলেও পরিবেশ অধিদপ্তর নিরব ভূমিকায়।
সরেজমিনে দেখা মিলে, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন বেড়ি এলাকায় ‘এমবিসি ব্রিকস’ নামক অবৈধ ইটভাটা পুরো দমে কাজ চলছে।
আশপাশের ফসলি জমি থেকে কেটে নিয়ে আসা হচ্ছে টপ সয়েল। ভাটার আগুনের তাপে আশপাশে থাকা গাছপালা ঝলসে গেছে। কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। টিনের চিমনি হওয়ায় ভাটার কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। ভাটার ইট-মাটি পরিবহনকারী ট্রাক্টরের চাকায় বেড়িবাঁধটিও ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে পড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়মনীতি কিংবা আইনের তোয়াক্কা না করে গত ৪ থেকে ৫ বছর ধরে কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই বাংলা এ ভাটাটির কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল জানান, ভাটার যানবাহন চলাচলে বেড়িবাঁধের রাস্তাটি নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও রাস্তার ধুলোবালিতে পুরো এলাকা বিবর্ণ হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় কৃষক আবুল কালাম বলেন, ফসলি জমির মাটি সব ইটভাটায় কেটে নিয়ে যায়। এতে জমি নিচু হয়ে পড়ে। পানি জমে থাকে। পরবর্তীতে ফসল হয় না।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল বাশার বলেন, ভাটাগুলোর কারণে কৃষি হয় না, গাছপালাও হয় না। আগে যেসব নারিকেল গাছে ফলন হতো, সেগুলোতে এখন নারিকেল ধরে না। সুপারি হয় না। ভাটার তাপে ফলজ গাছের ফুলগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
কৃষক শামছুল বলেন, ভাটার কারণে ক্ষেতের ফসল জ্বলে যায়। মানব দেহেরও ক্ষতি হচ্ছে। রোগবালাই লেগেই থাকে।
স্থানীয় যুবদল নেতা আবু তাহের বলেন, এ এলাকায় তিনটি ইটভাটা রয়েছে। একটি বাহার কোম্পানির, একটি মফিজ কোম্পানির ও একটি আলাউদ্দিন মানিকের। দুটি হাওয়ায় ভাটা এবং একটি বাংলা ভাটা। এসব ভাটার কাঁচামাল এবং ইট বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে পরিবহন করা হয়েছে।
এমবিসি ভাটা মালিক মো. মানিক বলেন, আপনারা নিউজ করেন। ভাটা বন্ধ করে দেন। আমাদের ভাটায় ৫ শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। ভাটা না থাকলে শ্রমিকরা চুরি-ডাকাতি করতো।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানা বলেন, ইটভাটায় মাটি কাটার বিরুদ্ধে আমরা অভিযান শুরু করেছি। আমরা ইটভাটাগুলোর বিষয়েও খোঁজ খবর নিচ্ছি। জেলা ম্যাজিস্টেটের নির্দেশনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বিভিন্ন উপজেলায় ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। সদর উপজেলার অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করব।
Leave a Reply