1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. admin@dailyamarsomoy.com : admin :
‘আমি আর এ দেশে থাকবো না’ সন্তানকে হারিয়ে শিক্ষক বাবা - দৈনিক আমার সময়

‘আমি আর এ দেশে থাকবো না’ সন্তানকে হারিয়ে শিক্ষক বাবা

নিজেস্ব প্রতিবেদক
    প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫

রক্তে জর্জর এক সকাল। গন্ধ মিশে গেছে পোড়া ইউনিফর্মে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়েছিল যে দিনটি, তা শেষ হয়েছে লাশের মিছিল আর পিতামাতার অসহ্য হৃদয়বিদারক কান্নায়।

মাত্র ১৪ বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়ান ইউসুফ। সকালে সে স্কুলে গিয়েছিল স্বপ্ন নিয়ে, সহপাঠীদের সঙ্গে হাসিমুখে প্রার্থনায় দাঁড়িয়েছিল।

সেই হাসি আর ফিরবে না কখনও। রাত ৩টা ৫০ মিনিটে তার মৃত্যু হয় বার্ন ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। শরীরের ৯৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে গিয়েছিল।

মর্গের সামনে সায়ানের নিথর দেহের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন তার বাবা ইউসুফ। পেশায় তিনি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। স্ত্রী কেমিস্ট্রির লেকচারার। কিন্তু আজ সব পরিচয়ের ওপরে তিনি কেবল এক সন্তানহারা পিতা।

কান্নায় গলা ভার হয়ে গেছে। কাঁপা কাঁপা গলায় তিনি বললেন, ‘আমি আর এ দেশে থাকবো না। এদেশের পলিটিশিয়ানরা এদেশটাকে পলিউট করে ফেলছে। আমরা থাকবো না এই দেশে।’

সকালে যেসব বাবা-মা সন্তানের হাত ধরে স্কুলের গেটে নামিয়ে দিয়ে ফিরেছিলেন কর্মস্থলে, তাদের অনেকেই সন্ধ্যার আগেই ছুটে এসেছেন হাসপাতালের মর্গে। কেউ বুঝতেই পারেননি কখন তাদের সন্তানকে আগুনে দগ্ধ অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স করে কেউ নিয়ে এসেছে। আবার কেউ এখনো জানেন না, তাদের সন্তান বেঁচে আছে কি না। যারা এখনো বেঁচে আছেন, তাদের অভিভাবকরা একরাশ শঙ্কা নিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন।

বার্ন ইউনিটের লবিতে চাপা কান্নার শব্দ যেন ধ্বনিত হচ্ছে প্রতিটি দেয়ালে। কেউ নির্বাক, কেউ ভেঙে পড়েছেন অজ্ঞান হয়ে। শুধু বার্ন ইনস্টিটিউট নয়, শোক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা নগরজুড়ে। কোনো শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ছুটি পাওয়ার আগেই চিরতরে ছুটি নিয়ে ফেলেছে পৃথিবী থেকে।

সায়ানের পরিবারের সদস্যরা জানালেন, রাত তিনটা থেকে কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। ‘ওসির আসার কথা ছিল। কিন্তু রাত তিনটার পর থেকে এখানে কোনো পুলিশ নেই। পাঁচটা লাশ অররেডি মর্গে আছে,’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন সায়ানের এক আত্মীয়।

সায়ানের মা সেই মুহূর্তে কিছু বলার অবস্থায় ছিলেন না। চিকিৎসকরা তাকে স্যালাইন দিয়ে সামলে রাখছিলেন। সন্তানের পুড়ে যাওয়া হাত যখন তারা দেখতে পেলেন, তখন চোখ দিয়ে আর শুধু পানি গড়ায়নি গড়িয়েছে এক নিঃশেষ হওয়ার বেদনা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com